রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ অপরাহ্ন

সাভার পৌর ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাভার পৌর ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্বদেশ ডেস্ক:

সাভারে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছুঁড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ব্যবসায়ীকে মারধর এবং টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে সাভার পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম দেওয়ানসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে সাভার মডেল থানায়। এ ঘটনার পর পলাতক রয়েছেন আসামিরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গতকাল সোমবার রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলার বাদী ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ আলী চুন্নু।’

মামলায় বলা হয়, গত শনিবার বিকেল ৫টায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে সাভার পৌরসভার আনন্দপুর এলাকার বিসমিল্লাহ ওয়াস ফ্যাক্টরি নামক বাদীর প্রতিষ্ঠানে চাঁদার দাবিতে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলায় ব্যবসায়ীর স্ত্রীসহ ৬ জন গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ২ জনকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মাসুমের নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার সময় নগদ ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয় বলেও মামলায় অভিযোগ করেন বাদী।

সাভার পৌরসভার নামাগেন্ডা এলাকার হোসেন আলীর ছেলে মাসুম দেওয়ান ছাড়াও এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেন (৩০), চাঁপাইন এলাকার বাসিন্দা ও ধর্ষণের অভিযোগে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানা ওরফে (৩৩), নামাগেন্ডা এলাকার হাবু মিয়ার ছেলে নাদিম দেওয়ান (২৪), উলাইল এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে টিপু (২৮), কাতলাপুর এলাকার বাসিন্দা বাবু (২৮), একই এলাকার পলাশ (৩০), মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পাভেল (৩৫), নামাগেন্ডা এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে সজীব (২৪)। এ ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগটি আমলে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করে পুলিশ।

মামলার বাদী জানান, গত একমাস ধরেই সাভার পৌর এলাকার আনন্দপুর মহল্লার বিসমিল্লাহ ওয়াশ ফ্যাক্টরিতে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল মাসুম দেওয়ান ও তার বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত শনিবার বিকেলে মাসুমের নেতৃত্বে ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে অভিযুক্তরা। চাঁদার বিষয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ আলী চুন্নুকে চর থাপ্পড় মারতে থাকে সাভার সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সোহেল রানা। পরে ওই ব্যবসায়ীর ছেলে আবির তার বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে আঘাত করে আবিরের বাম চোখের নিচে ফাটা রক্তাক্ত যখন করে। বাবু তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আবিরকে এলোপাথারি আঘাত করলে তার বাম হাতের হার ভেঙে যায়।

বাবা ও ছেলের ডাক চিৎকার শুনে ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী চুন্নুর স্ত্রী রত্না ও ছোট ভাই নান্নু তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে নাদিম দেওয়ান তার হাতে থাকা গ্যাসের লোহার পাইপ দিয়ে বাড়ি মেরে ব্যবসায়ী চুন্নুর ছোট ভাই নান্নুর বাম হাতে আঘাত করলে তার হাত ভেঙে যায়। ওই সুযোগে পাভেল নান্নুর পরনের পাঞ্জাবির পকেট থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে।

অন্যদিকে, নাদিম ব্যবসায়ী চুন্নুর স্ত্রী রত্নাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। ঘটনা দেখার পর ওই ব্যবসায়ীর ভাতিজা বাহাদুর এগিয়ে আসলে বাবু ও পলাশ তাকেও এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। এতে বাহাদুরের ডান চোখের নিচে ফাটা রক্তাক্ত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এ সময় আলমগীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনতাই করে।

চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে মাসুম দেওয়ান তার হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। অবশিষ্ট বাকি টাকা না দিলে ভুক্তভোগীদের হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

ঘটনার পর থেকে সাভার পৌর শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম দেওয়ান সহ অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগের ব্যাপারে তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, ‘মাসুমসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877